ইভিএমে প্রাপ্ত ভোট অডিটের সুযোগ নেই : সুজন
সিডি ডেস্কঃ
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে রাজনৈতিক মহলসহ ভোটারদের মধ্যে আস্থার সংকট রয়েছে। ইভিএমে প্রাপ্ত ভোট অডিটের (যাচাই-বাছাই) কোনো সুযোগ নেই। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ মিলনায়তনে ঢাকার দুই সিটির প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন তিনি। সুজন সম্পাদক বলেন, দেশের প্রেক্ষাপটে ইভিএম একটি বিতর্কিত ভোটপদ্ধতি। এটির প্রতি কারও কোনো আস্থা নেই। কারণ ইভিএমে ভোট মেনিপুলেট করা যায়। কেননা বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম (ইভিএম) মেশিনে ভোটার ভেরিফাইড পেপার অডিট ট্রেইল (ভিভিপিআইটি) নেই। কিন্তু ভারতের ইভিএম মেশিনগুলোতে এই প্রযুক্তি রয়েছে। অথচ ভারতের চেয়ে ১১ গুণ বেশি দামে ইভিএম মেশিন কিনেছে বাংলাদেশ। ভিভিপিআইটি প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভেরিফাইড পেপার অডিট ট্রেইল (ভিভিপিআইটি) প্রযুক্তি ইভিএমে সংযুক্ত থাকলে আপনি কাকে ভোট দিবেন- সেটার প্রিন্টেড কপি আপনি হাতে পেয়ে যাবেন। যার ফলে পরেও ভোট যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ থাকে। এই প্রযুক্তি সংযুক্ত করলে তখন আর ইভিএম নিয়ে বিতর্ক কারও মধ্যে থাকবে না। ইভিএম নিয়ে গত জাতীয় নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা গত জাতীয় নির্বাচনে দেখেছি ইভিএমে ভোটগ্রহণের চিত্র। নির্বাচনি কাজে জড়িত কর্মকর্তারা অনপুস্থিত ভোটারদের ২৫ শতাংশ ভোট দিতে পারত। ফলে ইচ্ছামত পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া যেত সেখানে। তথ্য প্রাপ্তি মানুষের মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক বলেন, ভারতের উচ্চ আদালত তথ্য প্রাপ্তিকে নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে রায় প্রকাশ করেছে। অথচ আমাদের দেশে তথ্য পেতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তথ্য অধিকার নিশ্চিতে সুজন একটি মামলা করেছে। সেই মামলায় আদালত বলেন, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সরকারি তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমাদের দেশে বাস্তবক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। ইসির ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের তথ্য না থাকা সম্পর্কে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের তথ্য থাকলে ভোটাররা প্রার্থী সম্পর্কে জানতে পারে, বুঝতে পারে। ফলে তারা যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। আমরা এ ব্যাপারে ইসিকে একটি উকিল নোটিশও দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটার জবাব এখনো আমরা পাইনি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো ব্যবসায়ী প্রভাবিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ বেড়ে গেছে। যার ফলে শিক্ষিত প্রার্থীদের সংখ্যা কমছে, কমে যাচ্ছে প্রার্থীদের মানও। সুজন সম্পাদক বলেন, সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলরদেরও মার্কা ভিন্ন রেখে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে দলগুলো। যেটা আইনসিদ্ধ নয়। আর একটি ব্যাপার বিরোধীদলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বাড়ছে আর ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের মামলা সংখ্যা কমছে। নির্বাচন কমিশন তাদের ইচ্ছামত সবকিছু করছে- কোনটা সৎ আর কোনটা অসৎ সেটার ধার ধারছে না তারা। মোদ্দাকথা ইসির ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। আর নির্বাচন কাজে জড়িত কর্মকর্তারাও ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতি অনুসরণ করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মেয়র প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ ও অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত তথ্য বিশ্লেষণ পাঠ করেন সুজনের সহসভাপতি দিলীপ কুমার সরকার। এ সময় সম্মেলনে সুজনের সভাপতি এম. হাফিজউদ্দিন খানও উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply